অং রাখাইন এর মর থেংগারি

বাংলাদেশে চাকমাভাষায় নির্মিত প্রথম চলচ্চিত্রের বিশেষ প্রদর্শনী

অং রাখাইন এর মর থেংগারি

১০ জানুয়ারি রাত ৮টা

থিয়েটার ইনস্টিটিউট মিলনায়তন, চট্টগ্রাম

শহরে টিকতে না পেরে আবার পাহাড়ের কোলে গ্রামে ফিরে আসে এক প্রান্তিক মানুষ কমল, সাথে একমাত্র সম্বল একটি সাইকেল। কমলের ছোট ছেলেটা বাবা আর সাইকেলে উল্লসিত হয়ে উঠলেও স্ত্রী তার এই খালি হাতে বাড়ি ফেরা মোটেও ভালভাবে নিতে পারে না। কমল ঠিক করে সে আর শহরে যাবে না। শহরে গিয়েও তো খালি হাতেই ফেরত আসতে হচ্ছে। কিন্তু প্রত্যন্ত এলাকার পাহাড়ে কাজ কোথায়। যেখানে মাটি ছিল সেখানে এখন পানি। এইখানে থাকলে অন্যদের মতো বসে বসে মদ খাওয়া আর গ্যাঞ্জাম হল্লা করা ছাড়া কাজ খুবই কম। কিন্তু কোণঠাসা মানুষই উত্তরণের উপায় খুঁজে নেয়।

কমল একদিন বুদ্ধি করে তার সাইকেল নিয়ে রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকতে শুরু করে। লোকজনকে তার সাইকেলে এগিয়ে দেবার প্রস্তাব দিতে থাকে যাকে পায় তাকেই। প্রথমে তো কেউ সাইকেলে উঠতেই চায় না। দেশের এই কোণায় কস্মিনকালেও কেউ কখনও সাইকেল দেখেছে? ধীরে ধীরে একজন একজন করে তার সাইকেলে উঠতে থাকে, কমলও তাদের বাজারে কি বাড়িতে এগিয়ে দেয়। কিন্তু কমল কারো কাছে কিছু চাইতে পারে না; কেউ কেউ টাকা দেয়, কেউ কেউ আবার দেয় না। পাহাড়ের চড়াই উৎরাই পথে বিপদও কম নয়। দুর্ঘটনা ঘটে, এবং যাত্রী আহতও হয়। সালিশে সাজাও হয় কমলের। বুড়াকে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে! আর যেহেতু পাহাড়ে যানবাহনের কারবার খুবই বিপদজনক, আর ও তো কারও সাথে কোনো আলোচনাও করেনি, সেহেতু সাইকেলে আর কোনো মানুষ ওঠানো নিষেধ, তবে মালপত্র নেয়া যাবে। একা কমল চুপ করে শোনে, মেনেও নেয় হয়তো, তার উন্নতি যে কারও জন্য চোখের কাঁটা হয়ে যাচ্ছে তা সে বেশ বুঝতে পারে। এবার তাকে সাইকেলে বিভিন্ন ধরনের মালামাল পৌঁছে দিতে দেখা যায়। বিনিময়ে টাকা নেয়। সে টাকায় বাজার সদাই করে সংসার চালায়, ছেলেকে স্কুলে দেয়। কিন্তু তার যে আরেকটা সামাজিক দায়িত্ব আছে সেটাও কেউ কেউ তাকে মনে করিয়ে দেয় গ্রামের দাদাদের দিকেও একটু নজর-টজর দেয়ার কথা, বিভিন্ন সংগঠনকে কিছু চাঁদা দেয়ার কথা ইত্যাদি। কমল স্রেফ না করে দেয়, এতো কষ্টের কামাই, প্রশ্নই আসে না। আর পরিণতিতে নেমে আসে তার সাইকেলটির এর উপর হামলা। কারা যেনো রাতের অন্ধকারে আসে কমলের স্বপ্ন ছিনিয়ে নিতে। ভাঙা সাইকেলটা পড়ে থাকে সামনেই।

এমনই এক গল্প উঠে আসে অং রাখাইন পরিচালিত চলচ্চিত্র ‘মর থেংগারি’-তে। সাউথ এশিয়ান ডকুমেন্টারি ফিল্ম ফেস্টিভাল ২০১৫ এর শেষদিনে চলচ্চিত্রটি’র বিশেষ প্রদর্শনী হতে যাচ্ছে। এই প্রদর্শনী হবে চট্টগ্রামের নন্দন কাননস্থ থিয়েটার ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে, আগামী ১০ জানুয়ারি রাত ৮ টায়।

উল্লেখ্য ইতোপূর্বে ঢাকায় ১৩তম আন্তর্জাতিক স্বল্পদৈর্ঘ্য ও উম্মুক্ত চলচ্চিত্র উৎসব ২০১৪ তে চলচ্চিত্রটির প্রিমিয়ার অনুষ্ঠিত হয়।

অং রাখাইন একজন তরুণ চলচ্চিত্র নির্মাতা। তিনি দীর্ঘদিন ধরে স্বাধীন চলচ্চিত্র নির্মাতা, চলচ্চিত্র এবং নাট্য আন্দোলনের কর্মী হিসেবে কাজ করে যাচ্ছেন। ‘মর থেংগারি (মাই বাইসাইকেল)’ তার প্রথম পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র। বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের এই ক্রান্তিকালে একটি আদিবাসী ভাষায় চলচ্চিত্র নির্মাণে যে সাহস প্রয়োজন সেটি চলচ্চিত্রে তার নিষ্ঠার পরিচয়বাহী।


সাতদিন/এমজেড/৮জানুয়ারি২০১৫

২ অক্টোবর ২০১৫

প্রদর্শনী

 >  Last ›