জাতীয় নৃত্যনাট্য উৎসবে
ইছামতির বাঁকে
পরিবেশনায়: সুকন্যা এবং বাংলাদেশ নৃত্যশিল্পী সংস্থা, ঢাকা
৩১ জানুয়ারি সন্ধ্যা ৭টা
মূল মিলনায়তন, শিল্পকলা একাডেমি, ঢাকা
ইছামতি নদীর তীরবর্তী বক্সনগর ও দীঘিরপাড় দুটি গ্রাম। বক্সনগরের দুলুর সাথে দিঘীরপাড় গ্রামের কলির মধ্যে একসময় গভীর ভালবাসার সম্পর্ক গড়ে ওঠে। দুলু নদীর পাড়ে বসে বাঁশি বাজায় আর কলি সখিদের নিয়ে গাঁয়ের হিজল তলায় ফুল কুড়ানোর ছলে ঘুরে বেড়ায় তার মনের মানুষের সান্নিধ্যের আশায়, আবার কখনোবা নদীর ঘাটে কলসী কাঁখে পানি আনার ছলে মনের মানুষটিকে দেখে আসার বাসনাটিকে সফল করতে ভুল করে না। দুলু’র বাঁশী কলিকে মোহিত করে। এ দূরন্তপনার মধ্যে একদিন কদম্ব তলায় দুলুর সাথে কলির মিলন হয়। এ দৃশ্যটি গাঁয়ের এক যুবক দেখে ফেললে ঘটনাটি কলির দাদীর কানে যায়। তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে কলিকে ঘরে আটকে রাখেন। কদিন দুলু-কলি কেউ কারো দেখা না পেয়ে শঙ্কিত হয়ে পড়ে। এক গভীর রাতে দুলু তার বাঁশীতে করুণ সুর বেজে উঠলে আহত পাখির মতো যেন ছটফট করতে থাকে কলির হৃদয়। দুলুও বিরহ ব্যাথায় কাতর হয়ে পড়ে। কলির দাদী এ ঘটনাটিকে কিছুতেই মেনে নিতে পারছিলেন না তাই তিনি তার ছোটবেলার এক বান্ধবীর নাতির সাথে কলি’র বিয়ে ঠিক করেন। একদিন কলির গায়ে হলুদের অনুষ্ঠানের আয়োজন হয়। কিন্তু দুলু’র বিরহে কাতর কলি ব্যাকুল হুয়ে ওঠে দুলু’র সান্নিধ্য লাভের আশায়। এক সময় হলুদের অনুষ্ঠানের সকলের চোখকে ফাঁকি দিয়ে কলি রাতের অন্ধকারে সকল ভয়-ভীতি তুচ্ছ করে প্রেমিক দুলুর সঙ্গে অজানার উদ্দেশ্যে পাড়ি দেয়। অজানা উদ্দেশ্যে চলতি পথে একসময় দুলু-কলি ক্লান্ত দেহে এক গাছের তলায় ঘুমিয়ে পড়ে।
এদিকে হলুদের অনুষ্ঠান থেকে কলি উধাও হয়ে যাবার পর উদ্বিগ্ন দাদী লাঠিয়ালদেরকে পাঠায় কলিকে উদ্ধার করতে। একসময় লাঠিয়ালরা গাছের তলায় দুলু-কলিকে দেখেতে পায় এবং কলিকে উদ্ধারের চেষ্টায় দুলুকে আক্রমণ করে লাঠিয়ালদের প্রতিরোধ করতে গিয়ে দুলু আহত হলে কলিকে নিয়ে লাঠিয়ালরা বাড়িতে ফেরার পথে বেদে বহরের লোকেরা লাঠিয়ালদেরকে প্রতিহত করে দুলু ও কলিকে উদ্ধার করে বেদে সরদারের কাছে নিয়ে যায়। দুলু-কলি’র সকল কথা শুনে সর্দার তাদেরকে বলে, তোমরা ভিন্ন গোত্রের লোক তাই তোমরা ফিরে যাও। কিন্তু দুলু ও কলি সরদারের কাছে অঙ্গীকার করে বলে তাদেরকে বেদের দলে নিলে তারা জীবনকে উৎসর্গ করবে। সরদার তাদের কথা শুনে খুশি হন এবং তাদেরকে বেদে দলের অন্তর্ভূক্ত করে নেন। এক সময় দুলু-কলি বেদেদের সকল আচার অনুষ্ঠানে অভ্যস্ত হয়ে ওঠে। একদিন কলি অপেক্ত হাতে এক গোখরা সাপ ধরতে গিয়ে বিষাক্ত গোখরার ছোবলে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। খবর পেয়ে দুই ওঝা তাদের তাণ্ডব নৃত্যে চিৎকার করে বিষ নামানোর মন্ত্র পড়ে। সাপের বিষ হতে কলিকে মুক্ত করতে না পেরে তাকে কলা গাছের ভেলায় করে নদীতে ভাসিয়ে দেয়। বেদেরা চোখের জলে কলিকে বিদায় জানায়। কলা গাছের ভেলা ধরে দুলু প্রিয়জনের বিরহে বিলাপ করতে থাকে। তখন সূর্যাস্তের পর ধীরে ধীরে আঁধার নেমে আসে আর কলির শবদেহ চোখের আড়াল হয়ে যায়। বিদায় লগ্নে দুলু’র বাঁশির করুণ সুরে আকাশ ভারী হয়ে ওঠে। এমনই এক গল্প দর্শকদের সামনে তুলে ধরে নৃত্যনাট্য ‘ইছামতির বাঁকে’।
এম.এ. করিম-এর রচনায় নৃত্যনাট্যটি পরিচালনা করছেন সুলতানা হায়দার। সংগীত পরিচালনায় থাকছেন আমানুল হক। নৃত্যনাট্যের বিভিন্ন চরিত্র রূপায়ণে আছেন ইলিয়াস হায়দার, মোঃ শাহজাহান, চয়ন, ইফতেখার রহমান সৌরভ, মাসিদ হাবিব, রুহুল আমিন, রনি, হোসেন, হালিম, মেহেদী, মিলন, রুমি, রোমান, মিলকন, মিম, সালমা চৌধুরী, ফারজানা আক্তার অন্তু, বিথী, অর্পা, নকশী, ঋতু, নাহিন, আঁখি, ললনা, হৃদিকা, জাহিনা, উন্নতি, জাহীন, বর্ষা, মুনমুন, ইতি, পিয়াসা, নাজমুন্নাহার, হোসনে আরা ও সুলতানা হায়দার।
সাতদিন/এমজেড/৩১জানুয়ারি২০১৫