বিকাল ৩টা, ঈদের ২য় দিন, এসএ টিভি
বিশেষ টেলিফিল্ম
কারেনের পাঙ্খা
রচনা ও পরিচালনা: দীপংকর দীপন
অভিনয়: উর্মিলা, সজল, ড: এজাজ
গ্রামের নাম নুরুপুর। সে গ্রামে এখনো বিদ্যুৎ পৌঁছায়নি। প্রথম বিদ্যুৎ পৌঁছলো সেখানকার মোটামুটি প্রভাবশালী পরিবার-দেওয়ান বাড়িতে। দেওয়ান বাড়ির ছোট্ট ছেলে টুটুলের এ নিয়ে সে কি উচ্ছাস!টুটুলদের বাড়ির সদস্য সংখ্যা সবমিলিয়ে ৬ জন। টুটুল, টুটুলের বাবা-মা, দাদী, বড় চাচা আর ছোটফুপু। বাড়িতে বাতি জ্বলে ঠিক, কিন্তু ফ্যান তখনো লাগানো হয়নি। বাবা শহর থেকে আসার সময় ফ্যানকিনে আনবেন, সে অপেক্ষায় টুটুল দিন গুণতে থাকে। পাড়াময় ছুটে বেড়ায়, আর বলে, ‘আমাগো বাড়িতে কারেনের পাঙ্খা লাগব!’ স্কুলের বন্ধুদের কাছেও এ নিয়ে তার আলাদা কদর। অবশেষে একদিন ফ্যান কিনে বাড়িতে ফেরেন বাবা। ফ্যান লাগানোও হয়। কিন্তু ফ্যান ঘোরে না। অতএব, শহর থেকে ‘ইঞ্জিনিয়ার’ ধরে আনেন বাবা। ইঞ্জিনিয়ার এসে ফ্যান ঠিক করে। ব্যাস, ঘুরঘুরকরে ফ্যান ঘুরতে শুরু করে টুটুলদের বাড়িতে।
আশেপাশের দশ বাড়ির লোকজন দলবেধে আসতে থাকে ‘কারেনের পাঙ্খা’র বাতাস চেখে দেখতে। ঘটতে থাকে আরো মজার সব ঘটনা। এদিকে, শহুরে ইঞ্জিনিয়ারের সঙ্গে এক ফাঁকে মন দেয়া-নেয়া হয়ে গেছে ছোট ফুপুর। ফুপু টুটুলেরসবচেয়ে কাছের মানুষ, সবচেয়ে প্রিয়ও। ফুপু কিছু না বললেও, টুটুল ব্যাপারটা ঠিকই টের পায়।মাঝে মাঝেই ছোট ফুপু লুকিয়ে লাঠি দিয়ে গুতা মেরে ফ্যানের তার ছিড়ে ফেলে, নয়তো সুইচ নষ্ট করে দেয়। এসব আসলে শহুরে ইঞ্জিনিয়ারকে বাড়িতে আনার ছুতো! টুটুল টের পায়, প্রায়ই গ্রামে আসে ইঞ্জিনিয়ার। চুপিচুপি ফুপির সঙ্গে দেখাও হয়। মাঝে মাঝেবাড়িতে কেউ থাকে না, তখন দুজন দরজা বন্ধ করেও থাকে। কেউ জানে না, শুধু টুটুল জানে।
ভালোই কাটছিল দিন। হঠাৎ ইঞ্জিনিয়ার যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়। এদিকে ভীষন ভেঙে পড়ে ছোটফুপু। কেননা ততদিনে সর্বনাশ যা হওয়ার হয়ে গেছে। নিজের শরীরে আরেকজনের অস্তিত্ত্ব অনুভব করতে শুরু করেছে সে! ছোট ফুপু এ-ও জানতে পারে, শহরে বিয়ে করেছে ইঞ্জিনিয়ার। সেদিন বাড়িতে কেউ ছিল না। স্কুল থেকে বাড়ি ফেরে টুটুল। দেখে ঘরের দরজা বন্ধ। অনেক ধাক্কাধাক্কি করে দরজা খোলে। দেখে, ফ্যানের সঙ্গে ঝুলছে ছোট ফুপুর লাশ! ছোট্ট টুটুল মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ে। ফ্যান দেখলেই তার মনে হয়, সেখানে কেউ একজন ঝুলছে। অবশেষে দেওয়ান বাড়ি থেকে কারেনের পাঙ্খা খুলে ফেলা হয়।