সন্ধ্যা ৭টা ৪৫ মি, ঈদের ২য় দিন, দেশ টিভি
বিশেষ নাটক: সেরাম বাটপার
রচনা: ফরহাদ লিমন
পরিচালনা: শেখ সেলিম।
অভিনয়: শখ, মীর সাব্বির, ফারুক আহমেদ, শর্মিলী আহমেদ
বগুড়ার সোনাতলা উপজেলার চুকাইনগরের তেকানী গ্রামের ফেকু স্কুলজীবন থেকেই তার কু-প্রতিভার স্বাক্ষর রাখতে শুরু করেছিল! হেন বাঁদরামি নেই, যা সে ছোটবেলায় করেনি। পরীক্ষার ফিস দিতে হবে বলে মানুষের কাছ থেকে হাত পেতে টাকা তুলে সে টাকায় ভিডিও গেম খেলতো ফেকু। প্রধান শিক্ষকের নাম ভাঙিয়ে ফাঁকিবাজ ছাত্রদের ব্ল্যাকমেইল করতেও ছাড়তো না। চাতুরতায় বড় বড় ঘাঁগু ব্যক্তিকেও হার মানাতো ফেকু। ফেকু যখন ধীরে ধীরে বড় হচ্ছিল, তার চাতুরতাগুলো মানুষ ঠকানোতে পরিবর্তিত হলো। মানুষ ঠকালেই যখন টাকার মুখ দেখা যায়, তখন ফেকু হিতাহিত জ্ঞান হারালো যেন। মানুষ ঠকানোর নিত্যনতুন ফন্দি বের করে তার সুফল পেতে থাকলো! মুরগির ফার্মগুলো থেকে মরা মুরগি কিনে বড় হোটেলে, ক্যাটারিং সার্ভিসে, কমিউনিটি সেন্টারে সাপ্লায়ারের কাজ শুরু করলো সে। ভালোই লাভের মুখ দেখলো এতে। এরপর হোটেলগুলোতে সস সাপ্লায়ারের কাজ নিলো। তবে সস্ বানানো হতো কাপড়ের সস্তা রং দিয়ে! এখানেও জমজমাট লাভ! তবে মানুষ ঠকানোর একমাত্র শর্ত হচ্ছে- বেশিদিন এক ব্যবসা ধরে রাখতে হয় না। ফেকুও পেশা বদলাতে থাকে দফায় দফায়। কিছুদিন এমএলএম ব্যবসাও চালায়। ডেসটিনি’র ভরাডুবির পর ফেকুও ফাঁকতালে যুব সমাজ থেকে ভালোই হাতিয়ে নেয়। অনলাইন বিজনেসেও বেশ লাভ জেনে ফেকু এ জায়গাটাও ছাড়ে না। নতুন নতুন পন্যের ছবি দেখিয়ে পুরোনো পন্য পাঠিয়ে বা না পাঠিয়ে পুরো টাকাটা হাতিয়ে নিয়ে সিম অফ করে দেয়। টাকার বন্যায় আনন্দে ভাসে ফেকু। বাড়িতে ফেকুর বৃদ্ধা দাদি অনেক ভাবে বোঝানোর চেষ্টা করে ফেকুকে। সে কোনোভাবেই বোঝে না কিছু। হেসেই উড়িয়ে দেয়। হাতে পয়সা আসলে মানুষ পত্রিকা খোলে। ফেকুও বাদ যায় না। তবে পার্থক্য হচ্ছে, ফেকু কোনো পত্রিকা বের করে না, পত্রিকার রেজিষ্ট্রেশন করে ‘প্রেস কার্ড’ নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় গরম নিয়ে বেড়ায়। এভাবেই একসময় পরিচয় হয় কণ্যায়দায়গ্রস্থ পিতা দবির সাহেবের সাথে। দবির সাহেবের অনিন্দ্যসুন্দরী মেয়ে পরীকে দেখে মাথা নষ্ট হয়ে যায় ফেকু’র। এ তো মানবী নয়, সত্যিই যেন কোনো পরী। পরীকে বিয়ে করার জন্য মরিয়া হয় ফেকু। পরীর একটাই চাওয়া- তাকে ঢাকঢোল পিটিয়ে স্বর্ণে মুড়িয়ে বৌ বানিয়ে নিতে হবে। গরীব ঘরের মেয়ে বলে সে কোনোদিন স্বর্ণ পড়তে পারেনি, বিয়েতে পড়বে বলে সারাজীবন স্বপ্ন দেখে এসেছে সে। পরীর সৌন্দর্যে মুগ্ধ ফেকু প্রচুর অর্থব্যয় করে সোনার গয়না বানিয়ে ঢাকঢোল পিটিয়ে পরীকে ঘরে তোলে। বাসর রাতে সুন্দর আগামীর স্বপ্ন সাজায় দুজনে। সকালে উঠে পরীকে কোথায় দেখে না ফেকু। সাথে বিয়েতে দেয়া গয়নাও গায়েব! গরীব শ্বশুরের ভাড়া বাড়িতে গিয়ে দেখে তালা মারা। বোঝে- এটা একটা চিটার গ্রুপ, যারা তাকে ভাওতা দিয়ে সম্পত্তি হাতিয়ে নিয়েছে! পাগলপারা হয় ফেকু। সম্পত্তির জন্য নয়, পরীর জন্য। সে সত্যিই মন থেকে ভালোবেসে ফেলেছিল পরীকে। ফেকু নিজের ভুল বুঝতে পারে। এতদিন মানুষের ক্ষতি করেছে, তার প্রাপ্য তো এমনই হওয়ার কথা ছিল। ফেকু ঠিক করে, আর কোনোদিন মানুষের ক্ষতি করবে না।